২০শে মে, ২০২৫ ইং, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

আসন্ন নগর সম্মেলনে যত আলােচনার কেন্দ্র বিন্দুই ডাবলুকে ঘিরে

নিজস্ব প্রতিনিধি: কেউ বলছেন, আবারও তিনিই ফিরছেন। আবার কেউ বলছেন, তিনি আর নন। অনেকে তুলে ধরছেন তার সাফল্যের ফিরিস্তি। অনেকেই আবার তা মানতে নারাজ। তিনি ডাবলু সরকার, রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। দলটির আসন্ন নগর সম্মেলনে তিনি আবারও একই পদে প্রার্থী। পক্ষ-বিপক্ষ মতামত যার যাই থাক, সম্মেলনের আগে এসে সবচেয়ে আলােচিত নামটি তারই। তবে রাজনৈতিক এই আলােচনাকে হঠাৎ করেই নাড়িয়ে দিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে ডাবলু সরকারকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু প্রচারণা। এসব প্রচারণায় ডাবলু সরকারের পরিবারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরােধিতায় সম্পৃক্ততা ও সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলের অভিযােগ আনা হয়েছে। এনিয়ে দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রতিক্রিয়া। দলের নেতাকর্মীদের অনেকেই দাবি করছেন, এসবের পেছনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের হাত রয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, আগামী ৬ মার্চ সম্মেলনে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার আবারও একই পদে প্রার্থী হিসেবে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর পরপরই মুক্তিযােদ্ধা সংসদের আদলে প্যাড তৈরি করে একটি প্রচারপত্র ছড়ানাে হয় নগরীতে। এই প্রচারপত্রে ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযােগের উল্লেখ থাকলেও অভিযােগকারী হিসেবে দায়িত্বশীল কারাে কোনাে নাম ছিলাে না। নগরীর স্থানীয় সংবাদপত্র অফিসগুলাের প্রেসবক্সেও এই প্রচারপত্র ফেলে যাওয়া হয়। সেখানে ডাবলু সরকারের পরিবারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরােধিতার অভিযােগ আনা হয়। নামহীন এই প্রচারপত্র নিয়ে আলােচনা যখন তুঙ্গে, তখনই ফেসবুকের কয়েকটি পেজে ওই প্রচারপত্রের ছবি তুলে ধরে ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের জমি দখল করার অভিযােগ তােলা হয়। এসবই ডাবলুর ঘনিষ্ঠ দলীয় নেতা ও অনুসারী কর্মীদের ক্ষুব্ধ করে তােলে। তাদের দাবি, এসবই সম্মেলনকে সামনে রেখে ডাবলুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার। নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আজাদের মতে, তারা জেনেছেন, যে পেজের এসব লিখা হয়েছে, তা বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে কাজ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেন, “ওই পেজের আগের পােস্টগুলাে খেয়াল করলেই বােঝা যায়, আওয়ামী লীগ ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিতর্কিত সব পােষ্ট ওখানে দেয়া হয়। আমরা নিশ্চিত, ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচারের উদ্দেশ্যও একই। তারা সম্মেলনের আগে একটি অস্থিতিশীলতা তৈরি আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে বিতর্কিত করার জন্যই এমনটি করছো” আজাদের শঙ্কা, এ ধরনের অপপ্রচার এখনই থামানাে না গেলে এই চক্রটি অন্য নেতাদের নিয়েও অপপ্রচারে নামতে পারে। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বাবুল বলেন, “আপনারা দেখেছেন, কিছুদিন আগে রাজাকারের তালিকা নিয়ে যখন একটা ভুল বােঝাবুঝি তৈরি হয়েছিলাে, তখন সেই সুযােগ নিয়ে বিএনপিজামাতপন্থি এই অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরাই আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজাকার আছে বলে অপপ্রচার শুরু করেছিলাে। সেটা কিন্তু এখনও থামেনি। তার মানে এটা ওদের একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। ডাবলু সরকারকে নিয়ে এই অপপ্রচারও তাদের সেই পরিকল্পনারই অংশ।” বিষয়টি নিয়ে আলােচনার মধ্যেই মুখ খুলেছেন মুক্তিযােদ্ধারা। রােববার মুক্তিযােদ্ধা সংসদ রাজশাহী মহানগর ইউনিট কমান্ড এক লিখিত বিবৃতিতে ডাবলু সরকারের পরিবারকে জড়িয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মুক্তিযােদ্ধা। সংসদ নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, এসব অভিযােগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণােদিত। সম্মেলনকে সামনে রেখে ডাবলু সরকার ও তার পরিবারের চরিত্র হননের উদ্দেশ্য নিয়েই এসব অপপ্রচারের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে বলে তারা মনে করেন। বিবৃতিতে সই করেন মহানগর মুক্তিযােদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযােদ্ধা ডা. আবদুল মান্নান, সফিকুর রহমান রাজা, আলাউদ্দিন সেখডুলু ও মাসুদ হােসেন, সাবেক সদস্য অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক, সাবেক বােয়ালিয়া থানা কমান্ডার মােতাহার হােসেন, হাবিব আহসান পান্না, মহসেন প্রমুখ। অনলাইনের এসব প্রচারণায় ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলের অভিযােগও আনা হয়েছে। বিআরটিসি বাস ডিপাের জায়গা ও সখিনা বাের্ডিংয়ের জায়গাসহ আরাে কয়েকটি জমি নিয়ে তােলা হয় এই অভিযােগ। তবে এখানেও ডাবলু সরকারের পাশে দাড়িয়েছেন নারীর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা। তারা সেই তথ্যগুলােকেও মিথ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণােদিত বলে উল্লেখ করেছেন। গত রােববার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানান, অপপ্রচারের উদ্দেশ্যে যে জমিকে সংখ্যালঘুর কাছ থেকে দখল হিসেবে দেখানাে হয়েছে, সেগুলাের একটিও সংখ্যালঘুর কাছ থেকে দখল করা নয়।লিখিত বিবৃতিতে নেতারা বলেন, বিআরটিসি বাস ডিপাের জমি প্রকৃত মালিক রবিউল ইসলাম ও সখিনা বাের্ডিংয়ের জমি ঢাকার সাভার উপজেলার সাবেক আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনাদৌলার কাছ থেকে কেনা হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নগর সভাপতি ড. সুজিত সরকার, সাধারণ সম্পাদক শ্যমল কুমার ঘােষ, যুগ্ম সম্পাদক রনজিৎ কুমার সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক উজ্জ্বল কুমার ঘােষ, পূজা উদযাপন পরিষদের জাতীয় পরিষদের সদস্য কার্তিক চন্দ্র হালদার, নগর সভাপতি অলােক কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক শরৎচন্দ্র, সহ সভাপতি শংকর ঘােষ, সদস্য সাধন কুমার রায় ও তপন সেন। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযােগকে ভিত্তিহীন দাবি করে সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, “এসব যা বলা হচ্ছে, তা নিয়ে আমার কাছে না শুনে কর্মীদের জিজ্ঞেস করুন। আমি আওয়ামী লীগ করি, আজীবন করে যাবাে। আমি দলের জন্য আমার পুরাে সামর্থ দিয়ে কাজ করি। সেজন্য কেউ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে তা মােকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।” 

Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ